গ্রেপ্তার হতেই কুন্তলের মুখে জনৈক গোপাল দলপতির যে নাম শোনা গিয়েছিল, আসলে কে এই গোপাল দলপতি?

গোপাল দলপতি

1

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের গ্রেফতারির পর উঠে এসেছে গোপাল দলপতির নাম। শনিবার গ্রেপ্তার হতেই কুন্তলের মুখে জনৈক গোপাল দলপতির নাম শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কে এই গোপাল দলপতি? এখন কোথায় রয়েছেন তিনি? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বেআইনি লগ্নিসংস্থার একটি মামলায় এখন তিনি তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন। ইডি সূত্রের খবর, প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

কুন্তলের দাবি, তাপস মণ্ডল ও গোপাল দলপতি মিলে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। কুন্তল বলেন, এই গোপাল দলপতি তাপস মণ্ডলের লোক। গোপাল তাঁর কাছ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন কুন্তল। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে তাপস সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, ‘গোপাল দলপতি মেদিনীপুরের ছেলে। গোপাল দলপতির আরেক নাম বিকাশ দলপতি আমাকে ও ধরেছিল কিছু ছেলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য। আমি বলেছিলাম, আমি এগুলো দেখি না। আমাদের সংগঠনের সদস্য কুন্তলের কাছে আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর কুন্তলই গোপাল দলপতিকে কাজে লাগিয়েছিল বাজার থেকে টাকা তোলার জন্য।’

যদিও এই গোপাল বা বিকাশ দলপতির ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। একাধিক চিটফান্ড দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে জি নেট অ্যাডওয়ার্ল্ড নামে একটি চিটফান্ড দুর্নীতি গ্রেফতার হন গোপাল ও তাঁর স্ত্রী। ওই বছর ১১ জানুয়ারি দমদম বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর গোপালের ঠাঁই হয় দিল্লির তিহাড় জেলে। বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

রবিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে গোপাল দলপতির পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়িতে থাকেন গোপালের বৃদ্ধ বাবা কালীপদ দলপতি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ নেই। ও জি নেট নামে একটা চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে জানতাম। কিন্তু তা বৈধ না অবৈধ তা জানা ছিল না। আমার সঙ্গে তার যোগ যোগাযোগ নেই।’ এমনকী ছেলে যে তিহাড় জেলে বন্দি সেকথাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেন বৃদ্ধ।

এখনও পর্যন্ত ইডি জানতে পেরেছে, তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা, উচ্চ-প্রাথমিকের জন্য ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং ২০১৪-র প্রাথমিকের টেটে চাকরিপ্রার্থীদের পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য ৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল কুন্তলকে। কিন্তু তাপস সব জেনেও কেন টাকা দিয়েছিলেন, তা জানতে তাঁকে ফের তলব করা হতে পারে বলে ইডি সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ-দুর্নীতিতে এই প্রতারণাচক্রের শিকড় অনেক গভীরে। সে পর্যন্ত পৌঁছতে আরও বেশ ক’জনকে জেরা করা হতে পারে। ইডি জেনেছে, শুধু প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিক নয়, এসএসসি-র গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন কুন্তল। সব খতিয়ে দেখতে জনৈক তন্ময়, তাপস মিশ্রদের ভূমিকাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে।