ফেলে আসা স্মৃতি

    ১৯৬০-৭০ বা ৮০র দশকে আকাশবাণী’র সংবাদ পাঠকদের মধ্যে কয়েকজনের নাম মনে গেঁথে গিয়েছিল । দেশবিদেশের সংবাদ পাঠকদের মধ্যে নীলিমা সান্যাল ছাড়াও ছিলেন ইভা নাগ , অসিত ভুষন দাশ , প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় , সত্যেন মিত্র এবং অনিল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ।

    স্থানীয় সংবাদ পাঠকদের মধ্যে যেসব নাম মনে আসছে তার মধ্যে দেবাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় , গৌতম ঘোষ, তরুণ চক্রবর্তী এবং …… দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ।
    বা উপেন তরফদার ॥

    ইংরাজি সংবাদে শুনতাম কিছু নামকরা নিউজ রিডার : This is All India Radio; The news, read by Surajit Sen. It was an age of legendary newsreaders, who were all household names: Barun Haldar, Pamela Singh, Sushil Jhaveri, Lotika Ratnam (Surajit’s sister), to name just a few.

    কলকাতার হিন্দি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন – দীপচাঁদ মিঠোলিয়া ।

    রবিবারের সকালগুলো আমাদের ছোটোদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন ” তোমাদের ইন্দিরাদি ” ওনার পরিচালনায় “শিশুমহল” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে । “ছোট্ট সোনা বন্ধুরা সব, কেমন আছো সকলে ? ভালোতো ?”

    তার কিছুক্ষন আগেই পঙ্কজ মল্লিক -এর পরিচালনায় ” সঙ্গীত শিক্ষার আসর ” শেষ হতো । বা সুপ্রভা সরকার এর ॥

    প্রতি সন্ধ্যায় ” ঠক-ঠক-ঠক ক্রুঊঊউ , ঠক-ঠক-ঠক … উমমমম ” এই ধরণের আওয়াজ দিয়ে শুরু হতো ” মজদুর মন্ডলির আসর ” ; তার পরেই আসরে নামতেন — ” মোড়ল-নিশীকান্ত-মঙ্গলময় ” প্রভৃতি চরিত্ররা ” পল্লিমঙ্গল আসর” জমিয়ে দিতে । সব পরিচালকদের নাম মনে নেই। তাহলেও সুধীন সরকারের নাম মনে রয়েছে।

    বুধবার বিকেলে ” গল্পদাদুর আসর ” নিয়ে বসতেন জয়ন্ত চৌধুরী। একবার ওনাকে দেখেছিলাম – “দাদু” বলে মোটেই মনে হয়নি । পরে পার্থ ঘোষও এই দায়িত্ব সামলেছেন।
    প্রায়দিন দুপুরবেলায় ” — কেটে কুচি কুচি করে নুন-ঝাল মাখিয়ে কড়া’তে তেল দিয়ে উনুনে ফুটিয়ে তাতে ছেড়ে দিয়ে … ” বেলা দে আসতেন তাঁর ” মহিলামহল” – এ ।

    প্রতি শুক্রবার রাত ৮ -টা থেকে রাট ৯ -টা : নাটক !
    কত যে ভালো নাটক শুনেছি তার লিস্ট বিশাল ।

    শনি-রবি দুপুরের ‘অনুরোধের আসর’ , রবিবার রাত সাড়ে ন’টায় ‘ ছায়াছবির গান”, দুপুরে নাটক ।

    “বিরূপাক্ষের আসর” নিয়ে বসতেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ।

    “সংবাদ সমীক্ষা” , “সংবাদ বিচিত্রা” ছাড়াও আরোও অনেক বিচিত্র অনুষ্ঠান ছিল । ১৯৬৮’র সম্ভবত ১৬ই অক্টোবর থেকে “বিবিধ ভারতী’ তে টুং-টুং শব্দ দিয়ে শুরু হলো বিজ্ঞাপন । সেগুলোও লোকের মুখে মুখে ফিরতো । যেমন
    সুরভিত এন্টিস্যাপ্টিক ক্রিম বোরোলিন

    যেমন ভোলা যায় না “নমস্কার, ইডেন উদ্যান থেকে বলছি পুষ্পেন সরকার” …….

    ভোলা যায় না সেই কন্ঠস্বর……..🎤🎤 নমস্কার। ইডেন উদ্যান থেকে মোহনবাগান এবং ইষ্টবেঙ্গল ম্যাচের ধারাবিবরণী দিচ্ছি আমি অজয় বসু। আমার সঙ্গে আছে সুকুমার সমাজপতি।
    টেস্ট ক্রিকেটের ধারাবিবরণী পুষ্পেন সরকার, অজয় বসু এবং কমল ভট্টাচার্য্য।

    শনিবার ও রবিবার•••••আরব্য রজনী, ডেনড্রাইটের শনিবারের বারবেলা, শ্রাবন্তী মজুমদারের বোরোলীনের সংসার, কেয়ো কার্পিন নাটকের দিন●●●● এই সব অনুষ্ঠানের জন্য সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম।

    *তখন জীবন এত দ্রুতগতির ছিল না। কিন্তু অনেক বেশী বর্ণময় ছিল। অনেক বেশী তৃপ্তি ছিল। *

    ••• হয়তো অনেক বেশী মনুষ্যত্ত্বও ছিল।।।

    সময়ের দূরবীন দিয়ে মাঝে মাঝে পিছন ফিরে তাকালে চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু ফেলে আসা স্মৃতির কোলাজ।