জুন মাসেই ধেয়ে আসছে তিনটি ঘূর্ণিঝড়; তেজ, বিপর্যয়, হামুন

বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল জানাচ্ছে জুন মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে তিনটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গরমে রীতিমতো নাজেহাল সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে একটি বা দুটি নয়, তিন তিনটি ঘূর্ণাবর্তের পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া মডেল।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে তৈরি হতে পারে তিনটি ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটির জেরে ভারতের মূল ভূখণ্ডে বিলম্বিত হচ্ছে বর্ষার আগমন। বাংলায় বর্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’-এর ইঙ্গিত। সোমবারই নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল আরব সাগরে। মঙ্গলে সেটি শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা। নাম ‘বিপর্যয়’ (Cyclone Biparjoy)।

মৌসম ভবন জানাচ্ছে, মৌসুমী বায়ুর মেঘমণ্ডলী এই নিম্নচাপের টানে ভারতীয় উপকূল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর জেরে বর্ষার আগমনের জন্য আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।

প্রথম যে সাইক্লোনটি তৈরি হবে তার নাম বিপর্যয়। এই নামটি দিয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল জানাচ্ছে উত্তর আন্দামান সাগর এর এই সাইক্লোনিক সার্কুলেশন রবি-সোম নাগাদ নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ৭ জুনের মধ্যে এই নিম্নচাপ শক্তি বাড়াবে। প্রভাব বাড়াবে পূর্ব মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে।

শেষ পর্যন্ত ৮ জুন থেকে ৯ জুনের মধ্যে এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে বিশ্বের আবহাওয়া মডেলের পূর্বাভাস। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তার নাম হবে “বিপর্যয়”। এর নাম দিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে ঘূর্ণিঝড় কোন অভিমুখে যাবে? তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন আবহাওয়াবিদরা। উত্তর বঙ্গোপসাগরে এর কতটা প্রভাব পড়বে সে বিষয়েও সুনিশ্চিত নন। প্রাথমিকভাবে মায়ানমার ও বাংলাদেশ অভিমুখ হলেও শেষ পর্যন্ত অভিমুখ পরিবর্তন হবে কিনা সেদিকেই নজর থাকবে আবহাওয়াবিদদের।

এরপরের সাইক্লোনটির নাম হবে তেজ। নামটি দিয়েছে ভারত

জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে আরবসাগরে। দক্ষিণ আরবসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে শনি রবিবার নাগাদ। এই ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে ৭ জুনের মধ্যে।

কেরল উপকূলের কাছাকাছি দক্ষিণ আরব সাগরে এটি নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে। উপকূল বরাবর এটি মহারাষ্ট্র ও গুজরাত উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে।

৮ জুন থেকে ১০ জনের মধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উপকূল বরাবর সমুদ্রেই অবস্থান করবে। এই গভীর নিম্নচাপে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তার নাম হবে “তেজ”।

শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় তেজ ভারতবর্ষের উপকূলে নাকি পাকিস্তানের উপকূলে আছড়ে পড়ে সেদিকেই নজর থাকবে আবহাওয়াবিদদের।

এবং তিন নম্বর সাইক্লোনটির নাম হবে হামুন যা দিয়েছে ইরান। মধ্য আরব সাগরে যে সাইক্লোনটি তৈরি হতে পারে তাঁর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার হতে পারে বলে পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে, মুম্বই সংলগ্ন যে সাইক্লোনটি তৈরি হতে পারে তা গুজরাটের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে আট তারিখ থেকে সাইক্লোন তৈরি হতে পারে, জানা গিয়েছে এমনটাই। যদিও মৌসম ভবনের তরফে এখনও কোনও পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। কবে এই ঘূর্ণিঝড়গুলি তৈরি হবে বা তার গতি পথই বা ঠিক কী হতে চলেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ফলে আপাতত সেদ্ধ হওয়াই নিয়তি বাংলার। অন্তত ১০ জুন পর্যন্ত রাজ্যের ১৪ জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, ৯ তারিখ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা-সহ সব জেলাতেই ভ্যাপসা গরম আর ঘর্মাক্ত পরিবেশ। রাস্তায় বেরলো ঘামে স্নান আমাদের করতেই হবে। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে উত্তর-দক্ষিণ দিনাজপুর পর্যন্ত একই পরিস্থিতি বজায় থাকবে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের এখনও কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।