আজ পশ্চিবঙ্গ দিবস ; হিন্দু বাঙালিরা পুরো ইতিহাস জানুন


বঙ্গের ইতিহাস বহু পুরানো। তবে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি কি? দ্রাবিড় উপজাতির ভাষা থেকে বা সংস্কৃত থেকে এই নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়।

দীর্ঘ সংগ্রামের পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। দেশের বাংলা প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল পেয়েছিল ‘অঙ্গরাজ্য’ মর্যাদা। তখনই নাম হয় পশ্চিমবঙ্গ। অবশ্য দাফতরিক ভাষা ইংরেজিতে নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’। উল্লেখ্য, বলা যেতে পারে দেশ স্বাধীন হলেও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলো ‘অখণ্ড বাংলা’-র। যা ছিল ইংরেজদের এবং নেহেরুর ‘চক্রান্ত’।

২০ জুন দিনটিকে অনেকেই দাবি করে থাকেন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে। কারণ এই দিনে বেঙ্গল অ্যাসেম্বলিতে রেজ্যুলেশন নেওয়া হয়েছিল বাংলা বিভাজনের। নিঃসন্দেহে বড় অবদান রয়েছে ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। ভারতবাসীর কাছে তিনি ‘হিরো’। আবার কারও কাছে ‘ভিলেন’। এরপরে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় বাংলা। দু’ই বাংলার আলাদা আলাদা নাম হয় পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ (WEST BENGAL)। পূর্ববঙ্গ যায় পাকিস্তানের দখলে। তখন ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে পরিচিত ছিল ‘পূর্ববঙ্গ’। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ অন্তর্ভুক্ত হয় ভারতের।

এক তীব্র মরণপণ সংগ্রাম ও রক্তস্নানের মাধ্যমে। এবং এটি দৃঢ়তার সাথেই বলা যায় যদি এই ভূখণ্ডটি সৃষ্টি না হতো, পূর্বতন অখণ্ড বঙ্গের অন্তত একটি অংশেও হিন্দুদের অস্তিত্ব থাকতো কিনা সন্দেহ। তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ ১৯৪৯ র পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২৯% র অধিকারী হিন্দুরা আজ সেখানে মাত্র ৮% এসে পৌঁছেছে এবং গবেষকদের মতে, উত্তরোত্তর ইসলামী বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার কল্যাণে সেটি শূন্য তে পৌঁছতে বেশী সময় নেবেনা। অর্থাৎ, ১৯৪৭ এ তৎকালীন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হিন্দু রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দেশবিভাগের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ র সৃষ্টি করেছিলেন তার সার্থকতা এই ভয়ঙ্কর সময়েই, যখন নিরন্তর আঘাতে সুস্থ, ধর্মীয় ও মানবিক চিন্তা রক্তাক্ত, বোঝা যায়।

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা নেই যে ভারতে অবস্থিত প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যেরই একটি করে রাজ্য দিবস আছে। অথচ সাম্প্রদায়িক বিভক্তি, রক্তস্নানের মধ্য দিয়ে বাঙালী হিন্দু জাতি র জন্য নির্মিত, ঐতিহাসিক ভাবে সত্য পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনে কেউ উৎসাহ প্রদৰ্শন করেননি। ভাবীকাল যদি জানতে চায় এই অনুৎসাহের কারণ – বাঙালী হিন্দু মনন কে অবদমিত করার জন্যেই কিনা – তখন তার উত্তর দিতে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ নেতৃত্ব প্রস্তুত থাকবেন তো? পয়লা মে পালিত হয় মহারাষ্ট্রে “মহারাষ্ট্র দিবস” হিসেবে, ১ লা নভেম্বর কর্ণাটক দিবস ও ৩০ শে মার্চ রাজস্থান দিবস পালিত হয়। কিন্তু পশ্চিমবংগর ক্ষেত্রেই এতো বিড়ম্বনা কেন? সমস্যা হল রাজনীতির সেই ব্যবসাদারদের যাদের কাছে দেশপ্রেম, স্বজাতিপ্রীতি ও চেতনা বিক্রেয়। তাঁরাই এই ক্ষেত্রে বৃহত্তম প্রতিবন্ধকতা। তবুও জাতির নিদ্রাভঙ্গ হয়, চেতনা র উন্মেষ ঘটে, কালের চাকা পরিবর্তিত হয় ও ইতিহাস তার নয়া দাবী নিয়ে জাতির সম্মুখীন হয়।

এটি স্মরণে রাখা প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্ট হয়েছিল দেশভাগের সময়, বিশেষত জাতীয় স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে, অন্যান্য রাজ্যগুলির অধিকাংশের জন্ম হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের একক সিদ্ধান্ত হেতু। পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্ট হয়েছিল এই ভূখণ্ডের হিন্দু জনসাধারণের ঐকান্তিক ইচ্ছায়, বিশিষ্ট হিন্দু বুদ্ধিজীবিদের নেতৃত্বে ও রাজ্যবাসীর নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের বঙ্গীয় আইনসভায় সম্মিলিত ভোটদানের মাধ্যমে। তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন এক ঐতিহাসিক ও আবশ্যিক কর্তব্যও বটে।

১৯৪৭-এ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আইন অনুসারে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগের ব্যবস্থা হল। যেহেতু বঙ্গীয় আইনসভা ভারত বা পাকিস্তানে যুক্ত হবার ব্যাপারে একমত ছিল না ফলে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইনসভা ভেঙে তৈরি হল পূর্ববঙ্গ আইনসভা ও পশ্চিমবঙ্গ আইনসভা। মুসলমান প্রধান অঞ্চল নিয়ে হল পূর্ববঙ্গ ও হিন্দু প্রধান অঞ্চল নিয়ে হল পশ্চিমবঙ্গ। ঐ দিনেই পশ্চিমবঙ্গ আইনসভার সদস্যরা ৫৮-২১ ভোটে বাংলাভাগের পক্ষে ও পাকিস্তানে যোগদানের বিপক্ষে ভোট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গঠন সুনিশ্চিত করেন। ১৯৪৭ সালের ২০শে জুন তৈরী হল পশ্চিমবঙ্গ ও তার আইনসভা।

ভারত স্বাধীন হল ১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭। কিন্তু ইতিহাসে এই প্রশ্নটি রয়ে যায় – অন্য কোন পন্থার কি সম্ভাবনা ছিল এই যন্ত্রণাময় পদ্ধতির পরিবর্তে? এই জিজ্ঞাসা এখনো দেখা দেয় গবেষক, চিন্তাবিদদের মনের গহনে কিন্তু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিবেচনা করল বাঙালী হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে পৃথক হওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ ছিলোনা।

বাঙালি হিন্দুর সম্বন্ধে লর্ড কার্জনের এই মূল্যায়ন আমাদের সাহায্য করে পরবর্তী যুগে ব্রিটিশ কর্তৃক বাঙালীর ধ্বংসের ধারাবাহিকতাকে অনুধাবন করতে। ব্রিটিশের যোগ্য সহযোগী হিসেবে মুসলিম লীগের পাকিস্তান গঠন ও হিন্দু জাতির নিশ্চিহ্নকরণের অভিমুখে ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কার্যাবলী এক নব অধ্যায়ের সৃষ্টি করে।

সমগ্র বাংলাতে হিন্দু আধিপত্য ক্রমাগত ক্ষুণ্ন করার সাথে ১৯৩২ সালের Communal Award, ভারত রক্ষা আইন – ১৯৩৫ প্রণয়নের মাধ্যমে অবস্থা এই পর্যায়ে পৌঁছল যে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ শ্রী নীরোদ চন্দ্র চৌধুরী পর্যন্ত স্বীকার করলেন হিন্দুদের দেখার কিছু থাকলো, বলার কিছু থাকলো কিন্তু করার কিছু থাকলোনা। অর্থাৎ ১৯৩৫-৩৬ সালের মধ্যেই অবিভক্ত বঙ্গের একদা প্ৰচণ্ড শক্তিশালী বাঙালী হিন্দু, কি শিক্ষা, কি অর্থনীতিতে, পথের কপর্দকহীন ভিক্ষুকে পরিণত হল প্রায়। যেটুকু বাকি ছিল তাও সম্পূর্ণ হল ১৯৩৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক শ্রীপদ্মর বিদায়ের মাধ্যমে। শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে এই প্রথম মুসলমান ও হিন্দুর সম্মুখ সমর হল ও শিক্ষাক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক কর্ম সত্বেও হিন্দু সমাজ পরাজিত হল।

৪০ র দশকের বাংলার মুসলিম লীগ সরকার দ্বারা আনীত মহা বিতর্কিত ও সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতদুষ্ট “Secondary Education Bill” এবং তার বিরুদ্ধে শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হিন্দু সমাজের সংগ্রাম রাজনৈতিক উত্তাপকে এক নয়া মাত্রা প্রদান করে। সংগ্রাম এতো গুরুতর হয়ে ওঠে যে জনাব আবু হোসেন সরকারের মতো ব্যক্তিও বলে ওঠেন যে এই bill শিক্ষাক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হলে, “হিন্দুস্তান বা পাকিস্তান র পরিবর্তে চারিদিকে শুধু গোরস্থানই থাকবে।”

কিন্তু পাকিস্তান গঠনের নেশায় উন্মত্ত মুসলিম লীগ ও জিন্না এই জ্ঞানগর্ভ উপদেশ শোনার জন্য অপেক্ষা করেননি। বাংলার বিধানসভায় একের পর এক bill এনে হিন্দুজমিদারশ্রেণীর ক্ষতিসাধন করে কৃষক দরদী সাজার উন্মাদনা তখন লীগ কে গ্রাস করেছে কিন্তু অচিরেই বোঝা গেল দরদের পরিবর্তে সমগ্র বাংলাতে এক ইসলামিক রাজত্ব গড়ার জন্যে সে মরিয়া। তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ হল আগস্ট ১৬, ১৯৪৬ র সম্মুখ সমর, ইতিহাসে যা প্রসিদ্ধ “Direct Action Day” হিসেবে। একইসময়ে ক্রমশ রসাতলে যাওয়া পরিস্থিতির ওপর রাশ টানার পরিবর্তে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সরকার উত্তাপ অনুভব করলেন সেই আগুনের যা সমগ্র ভারতকে দগ্ধ করল। ১৬ ই আগস্ট ও তারপরের কয়েকটি দিন কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যা ঘটল তাকে বোধহয় নারকীয় আখ্যাও দেওয়া চলেনা। তার প্রারম্ভ হয়েছিল মুসলিম লীগের নেতৃত্বে নৃশংসতম ইসলামী আক্রমণে, শেষ হল হিন্দুদের ভয়াল, ভয়ঙ্কর প্রত্ত্যুত্তরে। অক্টোবর ১০, ১৯৪৬ – কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমার রাত্রে গোলাম সারওয়ারের নেতৃত্বে নোয়াখালীর সংখ্যালঘু হিন্দুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল কাশেমের ফৌজ, যে অগ্নি নির্বাপিত করতে স্বয়ং গান্ধীজিকে ছুটে আসতে হয়েছিল সেখানে এবং নোয়াখালীর প্রতিক্রিয়ায় অক্টোবর ২৬ এ বিহারে হিন্দুরা ঝাঁপিয়ে পড়ল সেখানকার মুসলমান অধিবাসীদের ওপর। তারপরই জ্বলে উঠল উত্তরপ্রদেশের গড়মুক্তেশ্বর। এর মধ্যেই ঘটলো শ্রীহট্টের গণভোটের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় – যেদিন গণতন্ত্রের সমস্ত ধ্যানধারণার বলাৎকার করে শ্রীহট্টকে তুলে দেওয়া হল পূর্ব পাকিস্তানের হাতে ও তার সাথেই পূর্ণ হল বাঙালী হিন্দু সমাজের সর্বনাশের ইতিবৃত্ত। বাঙালীর সেই পলায়ন আজও থামেনি। ‘৪৭ এ তার পরিচয় ছিল ধুবুলিয়া উদ্বাস্তু ক্যাম্পের অধিবাসী হিসেবে, আজ তার পরিচয় আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পের উদ্বাস্তু হিসেবে।*

কিন্তু ১৬ ই আগস্ট যে ভয়ঙ্কর ঘটনাপ্রবাহ শুরু হল কলকাতায় (ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একদা রাজধানী) তা থামলোনা ভারতের স্বাধীনতার পরেও, এমনই ভয়ঙ্কর ছিল পারস্পরিক বিদ্বেষ, তৎসহ হিন্দু প্রতিক্রিয়া।*

“২৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৬ অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার গোরক্ষপুর অধিবেশনে দেশভাগের দাবী তুলে ‘স্বধর্ম রক্ষার কারণে রক্তস্নানের জন্যে’ হিন্দুদের প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন এল. বি. ভোপটকর। মহাসভা এই উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে ফেলে; চারমাস পরে সাতচল্লিশের এপ্রিল মাসে বঙ্গীয় হিন্দু মহাসভার তারকেশ্বর অধিবেশনে নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশভাগকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে তুলে ধরেন। নির্মলচন্দ্র বলেন, হিন্দুদের কাছে এটা জীবন-মরণের প্রশ্ন; ‘বাঙলার হিন্দুরা জাতীয় সরকারের অধীনে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠন করবে।’ দিল্লীর একটি সভায় শ্যামাপ্রসাদ এমনও বলেন যে, পাকিস্তান যদি নাও হয়, তাহলেও বাঙলার হিন্দুদের জন্য একটা আলাদা প্রদেশ চাই: Even if Pakistan is not conceded….we shall demand the creation of a new province composed of the Hindu majority areas in Bengal. সাতচল্লিশের গোড়াতেও শ্যামাপ্রসাদ দেশভাগের কথা বলেননি; কিন্তু এখন তাঁর মনে হয়, দেশভাগ ছাড়া অন্য কোন সমাধান তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।“*

“কলকাতার নাগরিক জীবন তখন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। টানা কারফিউ চলে অঞ্চলে অঞ্চলে। দাঙ্গার পিছনে সরকারের মদত রয়েছে। হিন্দু পত্র-পত্রিকার ওপরেও দমনপীড়ন চলছে। এক বিশেষ অর্ডিন্যান্স বলে অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, আনন্দবাজার পত্রিকা, মডার্ন রিভিউ-এর ওপর জরিমানা ধার্য করা হয়; বাজেয়াপ্ত করা হয় জমা রাখা টাকা (ডিপোজিট)। ক্রমাগত দাঙ্গায় উৎপীড়িত হিন্দুর ক্ষোভ তাই একটা সমাধানের দিশা দেখতে পায় হিন্দু মহাসভার দাবীতে; হিন্দু পত্র-পত্রিকাও সমর্থন করেন সেই দাবী।“*

‘অর্চনা’ পত্রিকা (শ্রাবণ, ১৩৫৪) তারকেশ্বর অধিবেশনের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা ছাপে। মডার্ন রিভিউ (মে, ১৯৪৭) মন্তব্য করে: ‘দেশভাগ এখন একটা “গৃহীত সত্য” (accepted fact) হয়ে গেছে।’ ডিসেম্বর মাসেই ‘প্রবসি লিখেছিল: ‘দুই সম্প্রদায়ের মিলনের আশা সুদূর পরাহত। ……বঙ্গ বিভাগের প্রস্তাব স্থিরভাবে বিচার করা প্রয়োজন হইয়াছে।’ সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করে এখন ‘প্রবাসী’; ‘শনিবারের চিঠি’ (বৈশাখ, ১৩৫৪) পরিষ্কার লেখে: ‘পৃথক হইয়া যাওয়াই ভাল।’ হিন্দু পত্র-পত্রিকার প্রচারে হিন্দু মহাসভার দাবী প্রায় গণদাবীর চেহারা নেয়। গ্যালপ পোলের ভেতর দিয়ে ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ প্রমাণ করে দেয়, পাঠকদের ৯৮ শতাংশই বাঙলা ভাগ চায়; বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার জন্যে অমৃতবাজার পত্রিকা ‘বেঙ্গল পার্টিশন ফান্ড’ নামে একটা তহবিলই খুলে ফেলে। “ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখা – ছেচল্লিশের দাঙ্গা” – শ্রী সন্দীপ বন্দোপাধ্যায়*

*কে ছিলেন না এই মহতী সংগ্রামে? পশ্চিমবঙ্গের দাবী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য্যায় একাকী কিন্তু ক্রমে যুক্তি ও বোধে শাণিত হয়ে তাঁর পাশে দৃঢ়চিত্তে এসে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ, শ্রী নলিনাক্ষ সান্যাল, পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র, শ্রী নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার, মেজঃ জেনাঃ এসি চ্যাটার্জি, শ্রী নলিনীরঞ্জন সরকার, শ্রী যাদবেন্দ্রনাথ পাঁজা, শ্রী বিধানচন্দ্র রায়, ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ডঃ মেঘনাদ সাহা, স্যার যদুনাথ সরকার, ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, ডঃ মাখলাল রায়চৌধুরী, অমৃতবাজার-যুগান্তর পত্রিকা গোষ্ঠী, আনন্দবাজার পত্রিকা, দৈনিক বসুমতি, Modern Review ও প্রবাসী গোষ্ঠী, ডঃ রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, ডঃ বিনয় সরকার প্রমুখ ব্যক্তিগণ।*

এমতাবস্থায়, ২০শে জুন, ১৯৪৭ অখণ্ড বাংলার হিন্দু প্রধান অঞ্চলের সদস্যরা পৃথকভাবে বসেন। কংগ্রেসের সঙ্গে হিন্দু মহাসভা ও কম্যুনিস্ট প্রতিনিধিরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ভোট দেয় এবং পক্ষে সর্বমোট ভোট পড়ে ৫৮টি। মুসলিম লীগ বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের বিরোধী হিসেবে দলবদ্ধভাবে ভোট দেয়; তাদের পক্ষে ভোট পড়ে ২১টি। ৫৮-২১ ভোটে বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব, সমস্ত প্রতিকূলতার বিপক্ষে আসীন হয়ে, গৃহীত হয়ে। এটি বলা প্রয়োজন, মাউন্টব্যাটেন রোদেয়াদে এটি পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল, একটি বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিরা বাংলা ভাগে ইচ্ছুক হলেই, প্রস্তাব গৃহীত হবে। হিন্দু বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেস সেই পথেই যায়, সৃষ্টি হয় পশ্চিমবঙ্গের।*

*গত ৭০ বছরের অধিক সময় ধ‌রে ভাগীরথী দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে। মূলত, হিন্দুদের জন্য গঠিত হলেও পশ্চিমবঙ্গ এখন হিন্দুদের হাতছাড়া; অবস্থা এমন যে তাঁরা বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত প্রকাশ, প্রতিবাদে আগ্রাসী হওয়ার সাহসটুকুও হারিয়েছেন।।