বাগুইআটির দুই ছাত্রর হত্যার ঘটনা মানে করিয়ে দিচ্ছে CPI(M)র জামানায় সঞ্জীব চ্যাটার্জী এবং তীর্থঙ্কর দাশ শর্মা, নবম শ্রেণীর দুই ছাত্রর মার্ডার কেস ; যা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জ্যোতি বসু CBI কে কেস দেন নি

বাগুইআটির নৃশংস খুনের ঘটনায় সঞ্জীব-তীর্থঙ্করের স্মৃতি মনে করাচ্ছে বাঙালিকে

১৯৮৩ সাল ২রা মার্চ। সঞ্জীব চ্যাটার্জী এবং তীর্থঙ্কর দাশ শর্মা, খড়দহ রামকৃষ্ণ মিশনের নবম শ্রেণীর দুই ছাত্র, ওইদিন বিকেলে ব্যারাকপুর অঞ্চলে, বাড়ি থেকে খেলতে বেরিয়ে উধাও হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ছেলে দুটিকে খুঁজে না পাওয়ায়, সেদিনই গভীর রাতে স্থানীয় থানায় ডায়েরি করা হয়। কিন্তু ছেলে দুটিকে পাওয়া যায় না।

৫ই এপ্রিল ১৯৮৩ তারিখে, ছেলেদুটির বাড়ির লোক একটি চিঠি পায়! পাণ্ডুয়া স্টেশনে কাছে রেল লাইনে উপর দুই কিশোরের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো। স্থানীয় পুলিশ মৃতদেহ দুটি পুড়িয়ে ফেলেছে। কিন্তু কেন? কিসের ভয়ে সেদিন কিংবা কোন ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য পুলিশ দুটো বাচ্চার মৃতদেহ বাবা মাকে না জানিয়েই পুড়িয়ে ফেলেছিলো ?

জিআরপি রেল লাইনের উপর দুটি কিশোরের মৃতদেহ খুঁজে পেয়ে, স্থানীয় থানায় জানালে, স্থানীয় থানার পুলিশ ছেলে দুটির পরিচয় উদ্ধার করার কোন চেষ্টা না করেই, তড়িঘড়ি মৃতদেহ দুটি পুড়িয়ে ফেলে!
জিআরপি তে সংরক্ষিত থাকা মৃতদেহের ছবি এবং স্থানীয় থানায় রাখা মৃতদেহের পোশাক দেখে দুই কিশোরের বাড়ির লোকেরা, নিজের নিজের সন্তানদের চিনতে পারে।

এরপর সন্তানহারা দুই হতভাগ্য বাবা-মা, চিঠি নিয়ে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরতে থাকে। কিন্তু জ্যোতি বসুর প্রশাসনের থেকে সামান্য সহানুভূতি টুকু পান নি। খুনের ঘটনার আসল সত্যি উদঘাটন করার অনুরোধ জানালেও, জ্যোতি বাসু সন্তানহারা পিতামাতার কাতর অনুরোধে কর্ণপাত করে নি!

এমনকি ব্যারাকপুরে, ছেলেদুটির স্থানীয় এবং আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা, মুখ্যমন্ত্রীকে গণ চিঠি দিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেও পাত্তা দেয় নি তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বাসু। “ভগবান বললেও সিবিআই কে তদন্ত করতে দেবো না!” এটাই ছিল তার নির্দেশ।

আজ বাগুইহাটির দুই ছাত্রের মার্ডার কেসের মতনই পুলিশ সেদিন চুপ ছিল। সন্তান হারা মা, বাবা পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু CPI(M)র দলদাসএ পরিণত হওয়া পুলিশ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠে পারে লেগেছিলো। এই সময় পুলিশ কিন্তু নিশ্চুপ হয়েই থাকে। ধীরে ধীরে সংবাদপত্র গুলির সমালোচনায় ক্রমশ জনমতের চাপ বাড়তে থাকে। এর পর শুরু হয় নতুন ধরণের খেল।

প্রথমে থানায় ডেকে পাঠিয়ে, ভালো ভাষায় মিষ্টি করে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা! তারপর পথেঘাটে, উড়ো চিঠির মাধ্যমে ভয় দেখানো শুরু হল। এই সময় এলাকার লোকজন বাড়ি পাহারা দেয়। এমন কি নিরাপত্তার জন্যে কোর্টে বিচারপতির সাহায্য চাইলে, বিচারপতি উত্তর চব্বিশ পরগনার পুলিশরর ডেপুটি কমিশনারকে, দুই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়। তারপর দিনের পর দিন আইনের কচকচি চলতেই থাকে চলতেই থাকে চলতেই থাকে।

তারপর কি হলো কেউ জানেনা, মানুষের স্মৃতি থেকে কালক্রমে সব চলে গেলো। আজও হয়তো কান পাতলে শোনা যাবে সঞ্জীব, তীর্থঙ্করের আত্মা বিচারের আশায় কেঁদে চলেছে।
কি এমন দেখে ফেলেছিলো, যা জাতি বসুর দলকে বিপদে ফেলতে পারতো? বাচ্চা দুটোকে যার জন্য নৃশংসভাবে মারতে হয়েছিল?