নীলবাতি গাড়ি হাতিয়ার করা ভুয়ো মুখ্যসচিব ধরা পড়লো ২ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগে

ভ্যাকসিন কাণ্ডে দেবাঞ্জনের 'কুকীর্তি'র মাঝেই সামনে এল আরও এক প্রতারণার অভিযোগ। নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের চিফ সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে৷ অনেকটা ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের মূল মাথা দেবাঞ্জন দেবের কায়দাতেই প্রতারণা চালাতো এই অভিযুক্তও৷ ভুয়ো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মুখ্যসচিব

শহরের আরও এক প্রতারণার অভিযোগ সামনে এল। নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের চিফ সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠল বাপ্পাদিত্য সাহা নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে৷ নিজেকে ‘মানবাধিকার কমিশনের মুখ্যসচিব’ পরিচয় দিয়ে এক যুবকের কাছে থেকে ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই বাপ্পাদিত্যর বিরুদ্ধে। দেবাঞ্জন দেবের কায়দাতেই প্রতারণা চালাতো এই অভিযুক্তও৷

শৌভিক দেবনাথ নাম এক যুবকের বিবাহবিচ্ছেদ মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু লক্ষ টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাপ্পাদিত্য সাহা নামে ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে । অভিযোগকারী অভিযোগ, নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের চিফ সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বাপ্পাদিত্য সাহা। এর জন্য নগদ দু’ লক্ষ টাকা অভিযোগকারীর কাছ থেকে বাপ্পাদিত্য নেন বলে অভিযোগ। টাকা নেওয়ার প্রমাণ হিসেবে স্টেট হিউম্যান রাইটস কমিশনের লেখা একটি রসিদও দেওয়া হয় বলে দাবি অভিযোগকারীর। বাঁশদ্রোণী থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়েছে বাপ্পাদিত্যের বিরুদ্ধে ।

অভিযোগকারী যুবক সৌভিক দেবনাথ বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা। তাঁর দাবি, স্ত্রী’র সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা নিয়ে কিছু সমস্যায় পড়ে বাপ্পাদিত্য নামক ওই ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বাপ্পাদিত্য নিজের ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে দাবি করেন যে, তিনি মানবাধিক কমিশনের মুখ্যসচিব। এমনকী, দেবাঞ্জনের মতো তিনিও নীলবাতির গাড়ি চড়তেন এবং বাপ্পাদিত্যের বাড়িতেও নীলবাতির গাড়ি দেখতে পান বলে দাবি করেছেন শৌভিক। সেটা দেখেই তাঁর বিশ্বাস হয়। বাপ্পাদিত্য তাঁকে বলেন ১৫ দিনের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ করিয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে।

দু’ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও অভিযুক্ত বাপ্পাদিত্য শৌভিকের কাছে আরও টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। মামলার নিষ্পত্তি করতে আরও পনেরো হাজার টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই মাসের মাঝামাঝি তিনটি পর্যায়ে আরও ন’হাজার টাকা তিনি দেন অভিযুক্ত বাপ্পাদিত্য সাহাকে।দু’ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও অভিযুক্ত বাপ্পাদিত্য শৌভিকের কাছে আরও টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। মামলার নিষ্পত্তি করতে আরও পনেরো হাজার টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। শেষ পর্যন্ত পনেরো হাজার টাকা না মেটালেও অভিযোগকারীর দাবি, এই মাসের মাঝামাঝি তিনটি পর্যায়ে আরও ন’হাজার টাকা তিনি দেন অভিযুক্ত বাপ্পাদিত্য সাহাকে।

অভিযোগকারীর দাবি, ‘কাজ হয়ে যাবে’ বলে বারবার আশ্বাস দিত। নিজেকে ‘প্রভাবশালী’ বলে দাবি করে পনেরো দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করে দেওয়ারও আশ্বাস দেয় বাপ্পাদিত্য। কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্তের গড়িয়ার বাড়িতেও যান অভিযোগকারী। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর বাপ্পাদিত্যএবং তার স্ত্রী তাকে হেনস্থা করেন বলেও অভিযোগ।

শৌভিকের দাবি, টাকা জমা দেওয়ার পর যে মানি রিসিপ্ট তাঁকে দেওয়া হয়, সেটা দেখেই সন্দেহ হয় সৌভিকের। তারপর বাপ্পাদিত্যের স্ত্রী ডিম্পি সাহা ওই যুবককে বলেন, মানবাধিকার কমিশনের হয়ে কিছু টাকা তাঁকে তুলে দিতে হবে। তখনিই তার সন্দেহ হয়। জানিয়ে দেন, তিনি ওই কাজ করবেন না। কিন্তু, টাকা তোলারর কাজ না করলে বিবাহ-বিচ্ছেদ মামলার কোনও রফা করা হবে না বলে জানিয়ে দেন অভিযুক্ত দম্পতি। সেই সময় থেকে টাকা চাওয়া শুরু করেন ওই যুবক। কিন্তু তখন থেকে সাহা দম্পতি কোনো টাকা ফেরত দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন।

অভিযোগকারীর আইনজীবী সৌমশুভ্র রায় বলেন, বাপ্পাদিত্য নিজেরকে মানবাধিকার কমিশনের চিফ সেক্রেটারি বলেছেন। কমিশনে এই ধরনের কোনও পদই নেই। অভিযুক্ত অভিযোগকারীকে যা যা কাগজপত্র দিয়েছে তা সবই ভুয়ো’। অভিযোগকারীর আর এক আইনজীবী দেবস্মিতা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, এই ধরনের বিবাহবিচ্ছেদ মামলার নিষ্পত্তি হিউম্যান রাইটসের বিষয়ই নয়। উনি শৌভিক দেবনাথের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অভিযুক্তের স্ত্রীও নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের রাজ্য সভাপতি বলে পরিচয় দেয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অভিযোগকারী যুবক। কিন্তু এইরকম কোনো পদই নেই।

এই দুই ভুয়ো পদের পর্দাফাঁস করতে এবং প্রতারণার শিকার যুবককে টাকা ফিরিয়ে দিতেই এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ১২০ বি, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ এবং ৪৭১ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।