অভিষেকের অফিসেই ‘কালীঘাটের কাকুর’ ঠিকানা

 

নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার প্রকাশ্যেই এল মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির ‘ক্যামাক স্ট্রিটের অফিস’।

গতকাল নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এই নতুন নাম প্রকাশ্যে এনেছেন আরেক অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল। তারপর থেকেই এক প্রকার কালীঘাটের কাকু বা সুজয় ভদ্রের সন্ধান শুরু হয়েছে। কে এই সুজয় ভদ্র। শাসক দলে তার অবস্থান কোথায়।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামনেই নিয়োগকাণ্ডে ধৃত তাপস মণ্ডল জানান, ‘কুন্তল ঘোষই বারেবারে কালীঘাটের কাকুর কথা বলতো। কালীঘাটের কাকুকে টাকা দিতে হবে, বলতো সে। সুজয় ভদ্রই সেই কালীঘাটের কাকু’। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-র কাছেও তিনি তা জানিয়েছেন। জানা গেছে, লাগাতার জেরার মুখে নিয়োগকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষও ইতিমধ্যে সিবিআই-র কাছে ‘কালীঘাটের কাকু’ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।

তদন্তের এবার প্রকাশ্যেই এল অভিষেক-যোগ, কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তের পরে এবার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে।

জেরায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, হুগলির আর এক তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই সুজয় ভদ্রের। চাকরি দেওয়ার গ্যারান্টি আছে কি না, সে ব্যাপারে কুন্তলকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাপস। সেই সময় শান্তনু ও সুজয় নাকি তাপস মণ্ডলকে আশ্বস্ত করেছিলেন। সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার কোনও এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল শান্তনু ও সুজয়ের। তাঁরা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

বলাগড়ের বাসিন্দা যুব তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ যে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছিল তার একটা বড় অংশ পৌঁছাতো এই ‘কালীঘাটের কাকু’র কাছে। তবে এটাই চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল না। ওই ব্যক্তি মূলত মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন, তাঁর হাত ঘুরেই টাকা পৌঁছাতে একেবারে শীর্ষ প্রভাবশালীর কাছে। এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরাও।

সাংসদ ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বলেই সুজয় ভদ্রকে চেনেন শাসক তৃণমূলের লোকজনও। সেই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে কেন নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা দিতে হত, তাই জানতে চাইছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।

অভিষেক ব্যানার্জির অফিসে বসা এই ব্যক্তিকে, কেন বছরের পর বছর প্রাইমারি থেকে এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি থেকে তোলা কোটি কোটি টাকা দিতে হত? সুজয় ভদ্রই সেই টাকা কি তিনি সংগ্রহ করতেন কারোর হয়ে?

২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে আগে যখন নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ সামনে এসেছিল তখনই প্রথম জানা যায় এই ব্যক্তির প্রসঙ্গে। ঐ স্টিং অপারেশনের সম্প্রচারিত ফুটেজেও অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে এক যুবকের সঙ্গে লেনদেনের ছবি দেখা গেছে।সঙ্গে মাঝবয়সি আরেকজন, যার পরিচয় দেওয়া হচ্ছে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র নামে। ফুটেজে দেখা যায় ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছে ওই যুবক দাবি করেছিল, একেবারে সঠিক ব্যক্তির কাছে এসেছেন। সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র নামে ওই ব্যক্তি রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে, অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গেও কথা বলিয়ে দিতে পারবে। অভিষেক ব্যানার্জির খুবই ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা হয়।

সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ পথ চলার সময় বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের মেম্বার ছিলেন। একসময় অভিষেক ব্যানার্জি এই সংস্থার কর্ণধার ছিলেন। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স থেকে পদত্যাগ করেন। বর্তমানে অভিষেক ব্যানার্জিও যেমন খাতায় কলমে নেই তেমনি সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রও সংস্থার ডিরেক্টর পদে নেই। ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ভাইপো সাংসদ অভিষেকের সঙ্গেই এই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। এখন ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’র বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সে রয়েছেন দু’জন- অমিত ব্যানার্জি ও লতা ব্যানার্জি।

এখন থেকেই বোঝা যাচ্ছে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র অভিষেক ব্যানার্জির কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলে। যে টাকা কুন্তল ঘোষকে পাঠাতে হতো সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে তাহলে সেই টাকার আসল গন্তব্য কী? এবার সেটাই স্পষ্ট করে জানতে চাইছে তদন্তকারী সংস্থা।

এবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তাই সুজয় ভদ্রকে তলবের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই জানা গেছে।